ঢাকা,বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪

৩২ নারী শ্রমিকের বেতন নেই ১৬ মাস

কক্সবাজার প্রতিনিধি :::
টেকনাফে সড়ক রক্ষাবেক্ষনের কাজে নিয়োজিত ৩২ জন অসহায় নারী কর্মী মাসের পর মাস বেতন পাচ্ছেন না। শ্রম দিয়েও নায্য পাওয়া না পেয়ে তারা এখন নিদারুন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। ঘুরছেন প্রশাসনের দ্বারে-দ্বারে। কিন্তু কোন প্রতিকার মিলছেনা।
অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ‘উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল’ নানা তালবাহানায় তাদের বেতন পরিশোধ করছে না। ২০১৪ সালের জুন মাসে ওইসব নারী কর্মীকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২ জন সুপারইভাজারের তত্ত্বাবধানে তারা কাজ করেন। কিন্তু নায্য পাওয়া না মিটিয়ে ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট একটি চিঠি ইস্যু করে তাদের সকলের নিয়োগ বাতিল করা হয়। নতুনভাবে নিয়োগ পান পুরোনোদের অনেকেই।
তাদেরই একজন টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের কচ্ছপিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোহম্মদ আলীর স্ত্রী মিনারা বেগম। তিনি বলেন, ‘সংসারের অভাবের তাড়নায় কাজ নিয়েছিলাম। রক্ত-ঘাম ঝরিয়ে কাজ করেও ১৬ মাসের বেতন পাইনি। খুব কষ্টে সংসার চলছে। সারাক্ষণ দু:শ্চিন্তায় আছি। এই ঈদের আগে টাকা না পেলে আমরা পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদও উদযাপন করতে পারবো না।’  মিনারা বেগম আক্ষেপ করে বলেন, ‘উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল শুরু থেকেই নারী কর্মীদের বেতন নিয়ে তালবাহানা করছেন। প্রতিবারই আন্দোলন করে বেতন আদায় করতে হয়। আড়াই বছর ধরে কাজ করছি। এর মধ্যে ১৬ মাসের বেতন পাবো। বিগত ৭ মাসে এক টাকাও দেয়নি। এর আগে একবার ৯ মাসের পাওনা না মিটিয়েই আমাদের ছাটাই করা হয়।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পে টেকনাফ উপজেলার বাস স্টেশন থেকে শাপলাপুুর পর্যন্ত ৩১.৫ কিলোমিটার সড়ক পর্যন্ত রক্ষাবেক্ষনের কাজ পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশাল। বিশ্বব্যাংকের শর্তানুসারে সড়কের প্রতি কিলোমিটারে একজন করে মোট ৩২ জন নারী কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। ওই নারী কর্মীদের দায়িত্ব ছিল রাস্তার ‘সোল্ডার’ এর মাটি কাটা, অপ্রয়োজনীয় গাছ-গাছালি  পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজ। নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের দৈনিক বেতন ধরার হয় ১২০ টাকা।
টেকনাফের কচ্ছপিয়া অংশের (চেইনেজ ৩৩ হতে ৪৮ কি:মি:) সুপারভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী আব্দুল আমিন বলেন, ‘ছাটাই করার আগে মাত্র ৪ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়েছে। ছাটাইয়ের আগে-পরে আমরা প্রায় ১৬ মাস কাজ করেছি। ওই টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে না।’
তিনি বলেন, ‘শামলাপুর থেকে টেকনাফের গোলচত্বর পর্যন্ত অংশে ৩২ জন নারী কর্মী কাজ করেছে। এর মধ্যে শামলাপুর থেকে বাহারছড়া পর্যন্ত ১৬ জন এবং বাকি ১৬ জন বাহারছড়া থেকে টেকনাফ গোলচত্বর পর্যন্ত রাস্তা, আশপাশের জঙ্গল ও নালা পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। এসব নারী শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের বেতন বকেয়া রয়েছে। প্রত্যেক কর্মীর মাসের ৩০ দিনে ৩ হাজার ৬ শত টাকা করে পাওয়ার কথা। ১৬ মাস কাজ করে প্রত্যেক শ্রমিকের প্রাপ্য ৫৭ হাজার ৬০০ টাকা। উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালের কাছে ৩২ জন শ্রমিকের মোট পাওনা রয়েছে ১৮ লাখ ৪৩ হাজার ২ শত টাকা।’
শামলাপুর এলাকার বাসিন্দা নারী কর্মী লাইলা বেগম বলেন, ‘বকেয়া বেতন আদায়ের জন্য আমরা ইতোমধ্যে মানববন্ধন করেছি। জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছি। উপজেলা চেয়ারম্যান, উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান বদিকেও বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে। এতকিছুর পরও বকেয়া বেতন পাইনি।’
বাহারছড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌলভি আজিজ বলেন, ‘নারী কর্মীদের ১৬ মাসের বেতন পরিশোধ করা হয়নি। তারা সকলে দু:স্থ ও অসহায়। তারা অন্য কোথাও শ্রম না দিয়ে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে কাজ করেছে। কিন্তু তারা বেতন দিচ্ছেন। কাল (আজ সোমবার) টেকনাফ উপজেলার উন্নয়ন কমিটির সভায় বিষয়টি উথাপন করা হবে।’
উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনাল এর স্বত্ত্বাধিকারী আতিকুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুর পর গত ২০১৫ সালের ২৪ আগস্ট পুরাতন সুপারভাইজার ও কর্মীদের পাওনা মিটিয়ে ছাটাই করা হয়েছে। পরে নতুন করে কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। পুরাতন নারী কর্মীরা কর্মস্থলে উপস্থিত থাকতেন না। ভাঙা সোল্ডারে মাটি দেওয়াসহ  অপ্রোয়জনীয় গাছগাছালি পরিষ্কার করার জন্য বলা হলেও তারা করতেন না। মাস শেষে শুধু বেতন গণনার জন্য তদবির করতেন। ওই কারণে তাদের ছাটাই করা হয়।
তবে যারা নতুন নিয়োগ পেয়েছেন তাদের কয়েক মাসের বেতন এখনও পরিশোধ করা হয়নি বলে স্বীকার করেন আতিকুল ইসলাম।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হাসান আলী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে পরিচালিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন ইন্টারন্যাশনালকে নিয়োগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধিনে যেসব নারী শ্রমিক কাজ করেছেন তাদের দীর্ঘ দিনের বকেয়া পরিশোধ করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।’

পাঠকের মতামত: